দেহ, মন ও আত্মসম্পন্ন মানুষ (পাঠ ১)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৫) - খ্রীষ্টধর্ম শিক্ষা দেহ, মন ও আত্মাসম্পন্ন মানুষ | - | NCTB BOOK
44
44

মানুষ একই সময়ে দৈহিক, মানসিক ও আত্মিক। দেহ, মন ও আত্মা এক। একটি আমের মধ্যে খোসা, শাঁস ও বীজ থাকে। সবগুলোই আমের অংশ। তিনটি মিলেই একটি আম। তেমনি দেহ, মন ও আত্মা এক। এগুলো এক মানুষেরই তিনটি অংশ। পবিত্র বাইবেলে লেখা আছে: "প্রভু পরমেশ্বর মাটি থেকে ধুলা নিয়ে মানুষকে গড়লেন এবং তার নাকে ফুঁ দিয়ে তার মধ্যে প্রাণবায়ু সঞ্চার করলেন; আর মানুষ সজীব প্রাণী হয়ে উঠল।" পবিত্র বাইবেলের এই বাণী থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, মানুষকে ঈশ্বর তাঁর নিজের ইচ্ছামতোই সৃষ্টি করেছেন। দেহ, মন ও আত্মা দ্বারা তৈরি মানুষই হয়ে উঠেছে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আমরা এবার দেহ, মন ও আত্মা সম্পর্কে জানব।

মানবদেহ: মানুষের দেহ ঈশ্বরের প্রতিমূর্তির মর্যাদার অংশ। দেহ হলো পবিত্র আত্মার মন্দির। কারণ মানবদেহ আত্মা দ্বারা সঞ্জীবিত। মানবদেহ খ্রীষ্টদেহের আশ্রয়ে পবিত্র আত্মার মন্দির হয়ে ওঠে। তাই মানুষের দেহ খুব গুরুত্বপূর্ণ। দেহের যত্ন বা দেহের পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য আমাদের প্রত্যেকের সচেতন থাকতে হয়।

মানবদেহের গুরুত্ব: আমরা ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট। ঈশ্বরের কোনো দেহ নেই। কিন্তু ঈশ্বর মানুষকে একটি সুন্দর দেহ দান করেছেন। এই দেহ দৃশ্যমান এবং এর মাধ্যমে আমরা কাজকর্ম করে থাকি। মানবদেহে রয়েছে অনেকগুলো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। মানবদেহের আছে মাথা, মুখ, নাক, চোখ, কান, হাত, পা ইত্যাদি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। প্রত্যেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের রয়েছে নিজ নিজ কাজ। যেমন মাথা দিয়ে আমরা চিন্তা করি, মুখ দিয়ে কথা বলি, কান দিয়ে শুনি, চোখ দিয়ে দেখি, হাত দিয়ে আমরা নানারকম কাজ করি, পা দিয়ে হাঁটাচলা বা দৌড়াদৌড়ি করি। মানবদেহের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা বিভিন্ন রকমের প্রতিবন্ধী তাদের কষ্ট দেখে আমরা দেহের গুরুত্ব খুব সহজেই অনুভব করতে পারি। মানবদেহের একটি অঙ্গ বিকল হলে মানুষের সহজ ও স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়। শুধু তাই নয় মানবদেহ ব্যবহার করে আমরা সব ধরনের কাজ করে থাকি। অদৃশ্য ঈশ্বরের কাজ দৃশ্যমান মানবদেহের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। মানুষের নানারকম ভাব ও অনুভূতির প্রকাশ মানবদেহের মধ্য দিয়েই হয়ে থাকে। অনেকে বলে থাকেন, মানুষের মুখের ভাষার চেয়ে তার দৈহিক প্রকাশ অনেক বেশি জোরালো। তাই মানবদেহ অতি গুরুত্বপূর্ণ।

মানবদেহের যত্ন ও পবিত্রতা রক্ষা করা: ঈশ্বর আমাদের যে দেহ দান করেছেন তার যত্ন নেওয়া খুবই দরকার। অতিরিক্ত সাজগোজ বা দামি দামি জিনিসপত্র ব্যবহার করা মানেই কিন্তু দেহের যত্ন করা নয়। বরং দেহকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, নিয়মিত ও প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণ করা, অসুস্থ হলে যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া, আবহাওয়া অনুযায়ী আরামপ্রদ পোশাক-পরিচ্ছদ পরা, পরিমিত পরিশ্রম, ব্যায়াম ও বিশ্রাম গ্রহণ করা বিশেষভাবে লক্ষণীয়।

দেহের যত্নের সাথে সাথে দেহের পবিত্রতার বিষয়টিও আমাদের লক্ষ করতে হবে। অনেক সময় মানুষ নানাভাবে দেহের অপব্যবহার করে থাকে। যেমন, নানারকম মাদকদ্রব্য সেবন করে, দেহের সঠিক যত্ন না নিয়ে বা নিজ দেহে নানারকম আঘাত করে দেহের ক্ষতিসাধন করে। কিন্তু ঈশ্বর চান আমরা আমাদের নিজেদের দেহকে সম্মান করি এবং অন্যদেরকেও সম্মান করি।

দেহগত দিক থেকে আমরা যে যেমন আছি ঠিক সেইভাবেই নিজেকে গ্রহণ করা আমাদের দরকার। দেহের আকার, গঠন, গায়ের রং এগুলোকে গ্রহণ করার মধ্য দিয়েও আমরা আমাদের দেহের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই। দেহ ব্যবহার করে আমরা যেন কোনো প্রকার পাপ না-করি। আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে যে আমাদের দেহ পবিত্র আত্মার মন্দির। এই দেহে ঈশ্বর নিজেই বাস করেন।

কাজ: নিজের খাতায় নিচের ছকটির মতো একটি ছক আঁক। উল্লিখিত অঙ্গগুলো যা যা করতে পারে এমন ৩টি করে ভালো কাজ লিখ ও পাশের জনের সঙ্গে সহভাগিতা করো।
মাথাহাতপা
চোখকানমুখ

এসো একটি রবীন্দ্র সংগীত গাই:
আমার যে সব দিতে হবে সে তো আমি জানি।
আমার যত বিত্ত, প্রভু, আমার যতো বাণী।
আমার চোখের চেয়ে দেখা আমার কানের শোনা আমার হাতের নিপুণ সেবা আমার আনাগোনা।
সব দিতে হবে, সব দিতে হবে।

Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion
;